‘ফজরের আজানের সময় খানা খেলেও রোযা হবে’ মর্মের হাদীসের ব্যাখ্যা কী?

শেয়ার করুন

প্রশ্ন

মুফতী সাহেবের কাছে আমার একটি জানার ছিল। যা খুবই জরুরী। আমাকে এক আহলে হাদীস ভাই একটি হাদীস দেখালো। যা আমার অতীতের বিশ্বাসকে নড়বড়ে করে দিল। আমরা সারা জীবন ধরেই জানি যে, ফজরের আজানের সময় হলে আর সাহরী খাওয়া যায় না। যদি আজান শুরু হবার পরও কেউ সাহরী খায়, তাহলে তার রোযা হবে না।

কিন্তু এক হাদীসের মাঝে আসছে যে, নবীজী আজান শুরু হবার পরও সাহরী বন্ধ করতে নিষেধ করছেন। বরং হাতে থাকা খানা খেয়ে শেষ করতে বলছেন।

যেমন হাদীসে আসছে যে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِذَا سَمِعَ أَحَدُكُمُ النِّدَاءَ وَالإِنَاءُ عَلَى يَدِهِ فَلاَ يَضَعْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُ ‏”‏ ‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ফজরের আযান শ্রবণ করে, আর এ সময় তার হাতে খাদ্যের পাত্র থাকে, সে যেন আযানের কারণে খাদ্য গ্রহণ বন্ধ না করে যতক্ষণ না সে তদ্বারা স্বীয় প্রয়োজন পূর্ণ না করে । [আবূ দাউদ, হাদীস নং-২৩৪২]

এখানে আযানের পরও খাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে কি আমাদের এতদিনের জানা কথাটি ভুল? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার এতোদিনের জানা কথা সম্পূর্ণই সঠিক। সুবহে সাদিকের সময় হয়ে গেলে বা ফজরের আজানের সময় হয়ে গেলে আর সাহরী খাওয়া যায় না। খেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এটাই সঠিক ও যথার্থ কথা।

وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ [٢:١٨٧]

আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। [সূরা বাকারা-১৮৭]

ফজরের আজান বিষয়ক উক্ত হাদীসের মর্ম বুঝার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের আজান বিষয়ে আগে বুঝতে হবে।

সেই সময় শেষ রাতে দু’টি আজান দেয়া হতো।

একটি হল, সাহরীর আজান বা তাহাজ্জুদের আজান। যা সুবহে সাদিক হবার আগে দেয়া হতো।

আরেকটি হল, ফজরের নামাযের আজান। যা সুবহে সাদিক হবার পর দেয়া হতো।

উপরোক্ত হাদীসে উদ্দেশ্য হল সাহরীর আজান বা ফজর তথা সুবহে সাদিক শুরু হবার আগের তাহাজ্জুদের আজান। যা হযরত বেলাল রাঃ সুবহে সাদিক হবার আগে সবাইকে জাগানোর জন্য দিতেন।

সুতরাং উক্ত হাদীস পেশ করে সুবহে সাদিকের পরও খানা খাওয়ার বৈধতা প্রমাণ করা যায় না। যদি কেউ সুবহে সাদিকের পর ফজরের আজান দেবার সময়ও খানা খায়, তাহলে তার রোযা অবশ্যই নষ্ট হয়ে যাবে। তার রোযাটি হবে না।

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ، – رضى الله عنه – قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ يَغُرَّنَّكُمْ مِنْ سَحُورِكُمْ أَذَانُ بِلاَلٍ وَلاَ بَيَاضُ الأُفُقِ الْمُسْتَطِيلُ هَكَذَا حَتَّى يَسْتَطِيرَ هَكَذَا ‏”‏

সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিলালের আযান এবং আকাশ প্রান্তে এ লম্বা রেখা যেন তোমাদেরকে সেহরী খাওয়ার ব্যাপারে ধোঁকায় না ফেলে যতক্ষন পর্যন্ত না এ শুভ্র রেখা পূর্বাকাশে এভাবে বিস্তৃত হয়। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন,এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাতদ্বারা আড়াআড়িভাবে ইংগিত করেছেন। [সহীহ মুসলিম-১/৩৫০, হাদীস নং-১০৯৪, ইফাবা-২৪১৭]

الفجر فجران، سمى الضرب الأول كاذبا…. والثانى هو البياض الذى يستطير ويعترض فى الأفق، ولا يزال يزداد حتى ينتشر، وسمى مستطيرا لذلك، يثبت به أحكام النهار، من حرمة الطعام والشرب للصائم وخروج وقت العشاء وجواز أداء الفجر (الفتاوى التاتارخانية-2\4، رقم-1490)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

আমাদের আরও কর্মসূচি

চলমান কর্মসূচি